বিষয়বস্তুতে চলুন

রোগ ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যার আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানগত শ্রেণীবিন্যাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

১৮৫০ সাল থেকেই রোগসমূ্হকে অধ্যয়ন এবং গবেষণার সুবিধার শ্রেণী বিভাজন করার প্রয়াস করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টাতেই ১৮৯৩ সালে প্রথম 'আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান' (International Statistical Institute) 'মৃত্যুর কারণের তালিকা' (List od Causes of Death) প্রকাশ করে। এই তালিকার ষষ্ঠ সংশোধনী 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংঘ'-এর (World Health Organization) তত্বাবধানে প্রকাশ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিভাজন (International Classification of Diseases, সংক্ষেপে ICD) । ১৯৬৭ সালে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সদন' 'WHO রোগ নামকরণ নিয়মাবলী'র (WHO Nomenclature Regulations) আধারে প্রস্তুত করে এবং সংঘ রাষ্ট্র সমূহকে রোগের নামকরণের জন্য ICD-র সর্বশেষ সংশোধনী ব্যবহার করার উপদেশ দেয়।

১৯৯০ সালে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সদন' ICD-র দশম সংস্করণ প্রস্তুত করে এবং ১৯৯৪ সাল থেকে সংঘ রাষ্ট্রসমূহের ব্যবহারের জন্য মুক্ত করা হয়। বর্তমানেও এই সংস্করণকে ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য একাদশ সংস্করণের কাজ এখনও চলছে।

ICD সমস্ত রোগ, স্বাস্থ্য পরিচালনার বিভিন্ন দিক ও রোগী চিকিৎসার সমূহ দিককে বিচার করে নির্দিষ্ট নিয়মে শ্রেণিবিভাজন এবং নামকরণ করে। রোগের চিকিৎসা, চিকিৎসা সম্পর্কিত ব্যয় নির্ধারণ, রোগে হওয়া শারীরিক ক্ষতি ইত্যাদি এই বিভাজনের আধারে নির্ণয় করা হয়। 'মৃত্যুর প্রমাণপত্র'-এ ICD-পদ্ধতিতে রোগ শনাক্ত করে দেওয়া বাধ্যতামূলক।

রোগের শ্রেণিবিভাজন করে শনাক্ত করা ছাড়াও এই নির্দেশাবলী রোগের আন্তর্জাতিক গবেষণায় থাকা নিদান সম্পর্কিত পার্থক্যসমূহ (Diagnostic differences) দূর করে। তার বাইরেও একই নির্দেশাবলী মেনে চললে কোনো একরকম রোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান প্রস্তুত করাতে বিশেষ সুবিধা হয়।

রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিভাজনর দশম সংস্করণের নিয়ম

[সম্পাদনা]

বর্তমান প্রচলিত দশম সংস্করণে মোট বাইশটা অধ্যায় আছে।

অধ্যায়. গোষ্ঠী শিরোনাম

  • I - A00-B99 - কিছু সংক্রমণ দ্বারা হওয়া রোগ (Certain infectious and parasitic diseases)
  • II - C00-D48 - Neoplasms
  • III - D50-D89 - রক্ত এবং রক্তের নির্মাণের সাথে জড়িত অঙ্গের রোগ ও কিছু রোগ-প্রতিরোধী প্রক্রিয়ার রোগ (Diseases of the blood and blood-forming organs and certain disorders involving the immune mechanism)
  • IV - E00-E90 - অন্তঃক্ষরা, পুষ্টি এবং সংশ্লেষণ ক্রিয়া জনিত রোগ (Endocrine, nutritional and metabolic diseases)
  • V - F00-F99 - মানসিক এবং ব্যবহারিক রোগ (Mental and behavioural disorders)
  • VI - G00-G99 - স্নায়ুতন্ত্রের রোগ (Diseases of the nervous system)
  • VII - H00-H59 - চোখ এবং সংশ্লিষ্ট অংশের রোগ (Diseases of the eye and adnexa)
  • VIII - H60-H95 - কান এবং 'মাস্টয়েড' অংশের রোগ (Diseases of the ear and mastoid process)
  • IX - I00-I99 - পরিবহন তন্ত্রের রোগ (Diseases of the circulatory system)
  • X - J00-J99 - শ্বাস তন্ত্রের রোগ (Diseases of the respiratory system)
  • XI - K00-K93 - পাচক তন্ত্রের রোগ (Diseases of the digestive system)
  • XII - L00-L99 - চামড়া এবং চামড়ার নিচের অঙ্গের রোগ (Diseases of the skin and subcutaneous tissue)
  • XIII - M00-M99 - হাড়-পেশী এবং সংযোগী কলার রোগ (Diseases of the musculoskeletal system and connective tissue)
  • XIV - N00-N99 - মূত্র এবং জননেন্দ্রিয় তন্ত্রের রোগ (Diseases of the genitourinary system)
  • XV - O00-O99 - প্রসূতি, প্রসব এবং প্রসবোত্তর অবস্থা (Pregnancy, childbirth and the puerperium)
  • XVI - P00-P96 - প্রসবকালীন অবস্থায় হওয়া কিছু অবস্থা (Certain conditions originating in the perinatal period)
  • XVII - Q00-Q99 - জন্মগত গঠন ত্রুটি এবং ক্রোমোজোমীয় ত্রুটি (Congenital malformations, deformations and chromosomal abnormalities)
  • XVIII - R00-R99 - অন্য অধ্যায়ে সন্নিবিষ্ট না করা লক্ষণ, বা পরীক্ষায় ধরা পড়া ত্রুটি (Symptoms, signs and abnormal clinical and laboratory findings, not elsewhere classified)
  • XIX - S00-T98 - আঘাত, বিষক্রিয়া বা অন্যান্য বাহ্যিক কারণের ফলে সৃষ্টি হওয়া অবস্থা (Injury, poisoning and certain other consequences of external causes)
  • XX - V01-Y98 - বহিরাগত কারণের ফলে হওয়া রোগ বা মৃত্যু (External causes of morbidity and mortality)
  • XXI - Z00-Z99 - স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারা অবস্থা বা অন্য কোনো কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আসা অবস্থা (Factors influencing health status and contact with health services)
  • XXII - U00-U99 - বিশেষ অবস্থার জন্য রাখা সংকেত (Codes for special purposes)

ICD দশম সংস্করণ মতে রোগ চিহ্নিত করার নিয়ম

[সম্পাদনা]

যেকোনো রোগের জন্য ওপরোক্ত প্রতিটি অধ্যাযে উল্লেখ মতে সংকেত প্রয়োগ করা হয়। মূল অধ্যায়ে থাকা প্রথম অক্ষরটি সেই অধ্যায়টি বোঝায়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সংখ্যা দুটিই একটা বিশেষ রোগকে এবং সেই রোগের বিশেষ অবস্থা বোঝাতে কখনো পরে অন্য দুটি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, 'প্লাজমোডিয়াম ভাইভেক্স' থেকে হওয়া ম্যালেরিয়া রোগের জন্য সংকেত হল: B51। যদি এই রোগের জন্য রোগীর প্লীহা ফাটে তবে তার জন্য যোগ দিতে হবে: .0। যদি এমন জটিলতা না থাকে, তবে যোগ দিতে হবে .9

B51.0 মানে হল 'প্লাজমোডিয়াম ভাইভেক্স' থেকে হওয়া ম্যালেরিয়া রোগ, এবং এই রোগের জন্য প্লীহা ফেটে যাওয়ার অবস্থা।

B51.9 মানে হল 'প্লাজমোডিয়াম ভাইভেক্স' থেকে হওয়া ম্যালেরিয়া রোগ, কোনো জটিলতা নাই।

কিছু রোগের জন্য একটা পঞ্চম সংখ্যাও যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

রোগ শ্রেণিবিভাজনের অন্যান্য নিয়ম

[সম্পাদনা]

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা নিজের মত রোগের শ্রেণী বিভাজনের জন্য পদ্ধতি তৈরি করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, মানসিক রোগেরশ্রেণী বিভাজনের জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে DSM (Diagnostic and Statistical Manual for classification of mental illness) ব্যবহার করা হয়। বর্তমান DSM - IV (চতুর্থ সংস্করণ) চলছে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]